বাংলাদেশ সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম ‘মুসলিম পারিবারিক আইন সংশোধন করে মেয়ে সন্তানকেও বাবার সম্পত্তির পূর্ণ উত্তরাধিকার হিসেব গণ্য করার প্রস্তাব করেছেন। এর পাশাপাশি মুসলিম পুরুষদের একসঙ্গে একাধিক স্ত্রী রাখার সুযোগও বন্ধ করার প্রস্তাব করেছেন।’
গত ২২ জুন ২০১৩ শনিবার ‘ফৌজদারি কার্যবিধি-১৮৯৮’র সংশোধনী বিষয়ে এক মতবিনিময় সভায় এ্যাটরনী জেনারেল এসব প্রস্তাব করেন।
তিনি আরো বলেছেন, ‘আইয়ুব খান মুসলিম পারিবারিক আইন সংশোধন করে দাদার উপস্থিতিতে বাবার মৃত্যু হলেও সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে তাকে জীবিত ধরে বন্টনের হিসাবের বিধান করা হয়েছে।’
এ সংশোধনীর ফলে হাজার হাজার পরিবার ও সন্তান উপকৃত হয়েছে উল্লেখ করে মাহবুবে আলম কোনো পরিবারে শুধু মেয়ে সন্তান থাকলেও সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে ছেলে হিসাবে গণ্য করার প্রস্তাব করেন।
“এখন কোন পরিবারে মেয়ে সন্তান থাকলেও ধরে নিতে হবে, ছেলে সন্তান আছে।”
প্রচলিত আইনে, ছেলে সন্তানবিহীন কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হলে তার মেয়েরা সম্পূর্ণ সম্পত্তি পায় না। সেখানে সম্পত্তির অংশীদার হয় প্রয়াতের ভাইয়েরা।
এক্ষেত্রে মেয়ে একজন হলে মৃত ব্যক্তির মোট সম্পত্তির অর্ধেক পাবে। আর একাধিক মেয়ে হলে তারা মোট সম্পত্তির তিনভাগের দুই ভাগ পাবে। বাকিটা মৃতব্যক্তির ভাই বা ভাইয়েরা পাবেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “আরেকটি বিষয়, দ্বিতীয় বিয়ের সুযোগ যে কোনভাবেই বন্ধ করতেই হবে। কারণ এটা অসংখ্য নারীর কান্নার কারণ।”
অ্যাটর্নি জেলারেল দেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা। ব্যক্তি জীবনে আমি আইনের লোক নই। সে কারণেই আইন সম্পর্কে গভীর জ্ঞান বা ধারণা না থাকাটাই স্বাভাবিক। নিঃসন্দেহে তিনি দেশের সকল আইনবিদের চেয়ে বেশি জ্ঞান রাখেন বলেই তাঁকে দেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা মনোনীত করা হয়েছে। তাঁর প্রস্তাবেই দেশের পবিত্রতম জাতীয় সংসদে আইন তৈরি হচ্ছে। এসব আইন পর্যায়ক্রমে সংবিধানে স্থান করে নিচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি তিনি দেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে যা করেন তা দেশের মঙ্গলের জন্যই করেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে উপরে উল্লেখিত সংবাদে যে দু’টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং আইন সংশোধন করার প্রস্তাব করেছেন তা দেশের জন্য কতটুকু মঙ্গল বয়ে আনবে তা আমার মত আইন সম্পর্কে একজন মুর্খ ব্যক্তির কাছে বোধগম্য নয়। কারণ বাংলাদেশ সংখ্যা গরিষ্ট মুসলমানের দেশ। যার সংখ্যা ৯০ ভাগের মতো। কিন্তু তিনি এমন দু’টি আইন সংশোধনের প্রস্তাব করেছেন যা সরাসরি পবিত্র কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিত। এতে করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মনে প্রচণ্ডভাবে আঘাত করবে। এসব আইন সংশোধন করা হলে তা কী মুসলমানেরা মেনে নেবে? জাতীয় সংসদে প্রণীত আইন জনগণের উপকারে না এসে তা যদি সংঘাত সৃষ্টি করে, জাতিকে বিভক্ত করে তা কি সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা এবং সরকারের জন্য সুখকর হবে। সনকার এমনিতেই বিভিন্ন কারণে বলতে গেলে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে ঠিক এমনি সময়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের পবিত্র কুরআন মজিদের সাথে সাংঘর্ষিক আইন প্রণয়ণ করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত হবে?
পিতার সম্পত্তির বাটোয়ারা সম্পর্কে আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কুরআন মজিদের সূরা আন নেসা’র ১৭৬ নম্বর আয়াতে বলেছেন,
“লোকেরা তোমার কাছে পিতা-মাতাহীন নিসন্তান ব্যক্তির ব্যাপারে ফতোয়া জিজ্ঞেস করছে। বলে দাও, আল্লাহ্ তোমাদের ফতোয়া দিচ্ছেন ঃ যদি কোনো ব্যক্তি নিসন্তান মারা যায় এবং তার একটি বোন থাকে, তাহলে সে তার পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধাংশ পাবে। আর যদি বোন নিসন্তানা অবস্থায় মারা যায় তাহলে ভাই হবে তার ওয়ারিস। দুই বোন যদি মৃতের ওয়ারিস হয়, তাহলে তারা পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশের হকদার হবে, আর যদি কয়েকজন ভাই ও বোন হয় তাহলে মেয়েদের একভাগ ও পুরুষদের দুইভাগ হবে। আল্লাহ্ তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট বিধান করেন, যাতে তোমরা বিভ্রান্ত না হও এবং আল্লাহ্ সবকিছু সম্পর্কে জানেন।”
নবম হিজরীতে এই আয়াতটি নাযিল হয়। মীরাসের বিধান বর্ণনার উদ্দেশ্যে পবিত্র কুরআনের সূরা আন নিসার শুরু থেকে আয়াতগুলো বর্ণনা করা হয়। আর এই আয়াতটি সূরা আন নিসার সর্বশেষ আয়াত। ফলে কারো বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, এ আয়াতটি পরিশিষ্ট হিসেবে সূরার সর্বশেষে রাখা হয়েছে।
বর্তমানে দেশে প্রচলিত আইনটি পবিত্র কুরআনবে অনুসরণ করে প্রচলন করা হয়েছে। আল্লাহ্ তা’আলা মেয়েদেরকে বেশি সম্মান এবং মর্যাদা দিয়েছে। সেকারণেই এই আয়াতের মাধ্যমে মেয়েদের সম্পত্তির বিভক্তি করে দিয়েছেন। পৃথিবীর অন্যকোন ধর্মে ইসলাম ধর্মের ন্যায় মেয়েদেরকে এত নিরাপত্তা এবং সম্পদের নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা দেয়নি। একজন মেয়ে বিয়ে হলেই সর্বগ্রথম স্বামীর কাছ থেকে পাচ্ছে আর্থিক নিরাপত্তা। বিয়ের প্রথম শর্ত হচ্ছে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে মোহরানা দেওয়া। এরপরে আসছে মেয়ের পিতা মারা গেলে পিতার সম্পক্তির অংশ (প্রতিজন ভাইয়ের অর্ধেক), মায়ের সম্পত্তি থেকে অংশ, স্বামী মারা গেলে স্বামীর সম্পত্তির অংশ। শুধু তাই নয়, পিতা মারা যাওয়ার পরেই ভাইয়েরাই বোনদেরকে সোয়ার-বিয়ার করে থাকেন। সে কারণেই আল্লাহ্ তা’আলা মেয়েদেরকে পিতার সম্পত্তির এক আনার মালিকানা প্রদান করেছেন।
প্রধান আইন কর্মকর্তা মুসলমান পুরুষদের চার বিয়ের বিরোধীতা করে একের অধিক বিয়ে নিষিদ্ধ করার যে প্রস্তাব করেছেন তাও পবিত্র কুরআন মজিদের সাথে সাংঘর্ষিক। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআন মজিদের সূরা আন নিসার ৩ নম্বর ও ৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
“আর যদি তোমরা ভয় কর যে, এতিম মেয়েদের হক যথাযথভাবে পূরণ করতে পারবে না, তাহলে যেসব মেয়েদের তোমরা পছন্দ করো তাদের মধ্য থেকে দুই, তিন বা চারজনকে বিয়ে করে নাও। কিন্তু যদি তোমরা তাদের সাথে ইনসাফ করতে পারবে না বলে আশংকা করো, তাহলে একজনকেই বিয়ে করো। অথবা তোমাদের অধিকারে (দাসীদেরকে) যেসব মেয়ে আছে তাদেরকে বিয়ে করো। বেইনসাফীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এটিই অধিকতর সঠিক পদ্ধতি।”
“আর আনন্দের সাথে (ফরয মনে করে) স্ত্রীদের মোহরানা আদায় করে দাও। তবে যদি তারা নিজেরাই নিজেদের ইচ্ছায় মোহরানার কিছু অংশ মাফ করে দেয়, তাহলে তোমরা সানন্দে তা খেতে পারো।”
মুসলিম ফকীহগণের মতে পবিত্র কুরআন মজিদের সূরা আন নেসার ৩ নম্বর আয়াতের মাধ্যমে স্ত্রীর সংখ্যা সীমিত করে দেয়া হয়েছে এবং একই সংগে এক ব্যক্তির চারজনের বেশী স্ত্রী রাখা ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। হাদীস থেকেও এর সমর্থন পাওয়া যায়। হাদীসে বলা হয়েছে ঃ তায়েফ প্রধান গাইলানের ইসলাম গ্রহণকালে নয়জন স্ত্রী ছিল। নবী স. তাঁকে চারজন স্ত্রী রেখে বাকি পাঁচজনকে তালাক দেবার নির্দেশ দেন। এভাবে আর এক ব্যক্তির (নওফল ইবনে মুয়াবীয়া) ছিল পাঁচজন স্ত্রী। নবী স. তার এক স্ত্রীকে তালাক দেবার হুকুম দেন।
এছাড়াও এ আয়াতে একাধিক স্ত্রী রাখার বৈধতাকে ইনসাফ ও ন্যায়নিষ্ট ব্যবহারের শর্ত সাপেক্ষ করা হয়েছে। যে ব্যক্তি ইনসাফ ও ন্যায়নিষ্ঠতার শর্ত পূরণ না করে একাধিক স্ত্রী রাখার বৈধতার সুযোগ ব্যবহার করে সে মূলত আল্লাহ্র সাথে প্রতারণা করে। যে স্ত্রী বা যেসব স্ত্রীর সাথে সে ইনসাফ করে না ইসলামী সরকারের আদালতসমূহ তাদের অভিযোগ শুনে সে ব্যাপারে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
কোনো কোনো লোক পাশ্চাত্যবাসীদের খৃষ্টবাদী ধ্যান-ধারণার প্রভাবে আড়ষ্ট ও পরাজিত মনোভাব নিয়ে একথা প্রমাণ করার চেষ্টা করে থাকে যে, একাধিক বিয়ের পদ্ধতি (যা আসলে পাশ্চাত্যের দৃষ্টিতে একটি খারাপ পদ্ধতি) বিলুপ্ত করে দেয়াই কুরআনের আসল উদ্দেশ্য। কিন্তু সমাজের এ পদ্ধতির খুব বেশি প্রচলনের কারণে এর ওপর কেবলমাত্র বিধি-নিষেধ আরোপ করেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ ধরণের কথাবার্তা মূলত নিছক মানসিক দাসত্বের ফলশ্রুতি ছাড়া আর কিছুই নয়। একাধিক স্ত্রী গ্রহণকে মূলগতভাবে অনিষ্টকর মনে করা কোনোক্রমেই সঠিক হতে পারে না। কারণ কোনো কোনো অবস্থায় এটি একটি নৈতিক ও তামুদ্দুনিক প্রয়োজনে পরিণত হয়। যদি এর অনুমতি না থাকে, তাহলে যারা এক স্ত্রীতে তুষ্ট হতে পারে না, তারা বিয়ের সীমানার বাইরে এসে যৌন বিশৃংখলা সৃষ্টিতে তৎপর হবে। এর ফলে সমাজ-সংস্কৃতি-নৈতিকতার মধ্যে যে অনিষ্ট সাধিত হবে তা হবে একাধিক স্ত্রী গ্রহণের অনষ্টিকারিতার চেয়ে অনেক বেশি। তাই যারা এর প্রয়োজন অনুভব করে কুরআন তাদেরকে এর অনুমতি দিয়েছে। তবুও যারা মূলগতভাবে একাধিক বিয়েকে একটি অনিষ্টকারিতা মনে করেন, তাদেরকে অবশ্যই এ ইখতিয়ার দেয়া হয়েছে যে, তারা কুরআনের রায়ের বিরুদ্ধে এ মতবাদের নিন্দা করতে পারেন এবং একে রহিত করারও পরামর্শ দিতে পারেন কিন্তু নিজেদের মনগড়া রায়কে অনর্থক কুরআনের রায় বলে ঘোষণা করার কোনো অধিকার তাদের নেই। কারণ কুরআন সুষ্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় একে বৈধ ঘোষণা করেছে। ইশারা-ইংগিতেও এর নিন্দায় এমন একটি শব্দ ব্যবহার করেনি, যা থেকে বুঝা যায় যে, সে এর পথ বন্ধ করতে চায়।
ইসলামী আইন এবং ইসলামী অনুশাসনের সাথে অন্য কোন সম্প্রদায় কিম্বা অন্যকোনে ধর্মের সাথে বিভিন্ন বিষয় সাংঘর্ষিক রয়েছে। পুরুষদের জন্য একাধিক বিয়ের নিয়ম আইন করে বদ্ধ করার মাধ্যমে মানুষকে জাহেলি যুগে ঠেলে দেওয়ারই নামান্তর মাত্র। বর্তমানে আমরা পশ্চিমা বিশ্বে কি দেখতে পাই। একের অধিক নারীকে বিয়ে করার বিধান বন্ধ করার ফলে প্রকাশ্য নগ্নতা, যৌনতা, অশ্লিলতা, বেহায়পনার প্রদর্শনী। একজন মুসলমান হিসেবে এধরণের নগ্নতা, যৌনতা বা বেহায়পনা কোন অবস্থাতেই কাম্য নয়।
জাহেলিয়াত যুগে এতীম মেয়েদের অধিকার চরমভাবে ক্ষুণœ করা হত। যদি কোন অভিভাবকের অধীনে কোন এতীম মেয়ে থাকতো আর তারা যদি সুন্দরী হতো এবং তাদের কিছু সম্পদ-সম্পত্তিও থাকতো তাদের অভিভাবকরা নামমাত্র মোহর দিয়ে তাদেরকে বিয়ে করে নিতো অথবা তাদের সন্তানদের সাথে বিয়ে দিয়ে সম্পত্তি আত্মসাৎ করার ফিকির করতো। এসব অসহায় মেয়েদের পূর্ণ অধিকার সংরক্ষণের ব্যবস্থা করার তারা চিন্তাও করতো না।
বুখারী শরীফে হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, মহানবী সা.-এর যুগে ঠিক এ ধরনের একটি ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। জনৈক ব্যক্তির তত্বাবধানে একটি এতীম মেয়ে ছিল। সে ব্যক্তির একটি খেজুর বাগান ছিল, যার মধ্যে উক্ত এতীম বালিকাটিরও অংশ ছিল। সে ব্যক্তি উক্ত মেয়েটিকে বিয়ে করে নিলো এবং নিজের পক্ষ থেকে ‘দেন-মোহর’ আদায় তো করলোই না, বরং বাগানে মেয়েটির যে অংশ ছিল তাও সে আত্মসাৎ করে নিলো। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সূরা আন নিসার ৩ নম্বর আয়াতটি নাযিল হয়।
পবিত্র কুরআনের সূরা আন্ নূরের ৫০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
“তাদের মনে কি (মুনাফিকীর) রোগ আছে? না তারা সন্দেহের শিকার হয়েছে? না তারা ভয় করছে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল তাদের প্রতি জুলুম করবেন? মূলত তারা নিজেরাই জালেম।”
বিষয়টি ব্যাখ্যা করলে আমরা দেখতে পাই মানুষ আল্লাহ্ রাসূল সা., আল্লাহ্র কিতাব এবং আল্লাহ্র দীন এবং এ ধরনের কর্মনীতি অবলম্বনের পেছনে তিনটি সম্ভাব্য কারণই থাকতে পারে। এক. যে মানুষটি ঈমানের দাবিদার সে আসলে ঈমানই আনেনি এবং মুনাফিকী পদ্ধতিতে নিছক ধোঁকা দেবার এবং মুসলিম সমাজে প্রবেশ করে অবৈধ স্বার্থলাভের জন্য মুসলমান হয়েছে। দুই. ঈমান আনা সত্ত্বেও তার মনে সন্দেহ রয়ে গেছে যে, রাসূল আসলে আল্লাহ্র রাসূল কি না, কুরআন আল্লাহ্র কিতাব কি না এবং কিয়ামত সত্যিসত্যিই অনুষ্ঠিত হবে কি না অথবা এগুলো সবই নিছক মুখরোচক গালগল্প কি না, বরং আসলে আল্লাহ্র অস্তিত্ব আছে কি না অথবা এটা নিছক একটা কল্পনা, কোনো বিশেষ স্বার্থোদ্ধারের উদ্দেশ্যে এ কাল্পনিক বিষয়টি তৈরি করে নেয়া হয়েছে কি না। তিন. সে আল্লাহ্কে আল্লাহ্ এবং রাসূলকে রাসূল বলে মেনে নেবার পরও তাঁদের পক্ষ থেকে জুলুমের আশঙ্কা করে। সে মনে করে আল্লাহ্র কিতাব অমুক হুকুমটি দিয়ে তো আমাদের বিপদে ফেলে দিয়েছে এবং আল্লাহ্র রাসূলের অমুক উক্তি বা অমুক কর্মপন্থা আমাদের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। এ তিনটি কারণের মধ্যে যেটিই সত্য হোক না কেনো, মোটকতা এ ধরণের লোকদের জালেম হবার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এ ধরণের চিন্তা সহকারে যে ব্যক্তি মুসলমানদের দলভুক্ত হয়, ঈমানের দাবি করে এবং মুসলিম সমাজের একজন সদস্য সেজে এ সমাজ থেকে বিভিন্ন ধরনের অবৈধ স্বার্থ আদায় করতে থাকে, সে এক বড়ো দাগাবাজ, বিশ্বাসঘাতক ও জালিয়াত। সে নিজের ওপর জুলুম করে। রাত দিন মিথ্যাচারের মাধ্যমে নিজেকে সে সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্বভাবের মানুষে পরিণত করতে থাকে। সে এমন ধরনের মুসলমানদের প্রতিও জুলুম করে যারা তার বাহ্যিক কলেমা শাহাদাত পাঠের ওপর নির্ভর করে তাকে এ মিল্লাতের একটি অংশ বলে মেনে নেয় এবং তারপর তার সাথে নানান ধরনের সামাজিক, সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক ও নৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে।
আল্লাহ্ তা’আলার বিধানকে অস্বীকার করে বা তা উপেক্ষা করার ফলে আদ জাতি, সামুদ জাতি, হযরত নূহ আ.-এর কওম, হযরত লূত আ.-এর কওমসহ আরো অনেক সম্প্রদায় এবং জাতি কিভাবে পৃথিবী থেকে ধ্বংস হয়েছে ইসলামের ইতিহাস পড়লেই তা আমরা দেখতে পাই।
আমরাও আশা করব দেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা, দেশের সরকার প্রধানের এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রপ্রধানের বোধোদয় হবে। আল্লাহ্ তাদেরকে এবং আমাদেরকে হেদায়ত দান করুন। আমিন।
লেখক : সাংবাদিক, গবেষক।
islamcox56@gmail.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন