রবিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৩

মাওলানা মুহাম্মদ আকরাম খাঁ বাংলা সাংবাদিকতার পথিকৃ


আজ ১৮ আগস্ট মাওলানা মুহাম্মদ আকরাম খাঁর ৪৪তম মৃত্যু বার্ষিকী। তিনি বাংলা সংবাদপত্র ও বাঙালি সাংবাদিকতার পথিকৃত। মওলানা মুহাম্মদ আকরাম খাঁ ছিলেন একাধারে সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং ইসলামী পণ্ডিত। তাঁকে বাংলা ভাষার সংবাদপত্রের জনক বললে অতুক্তি হবে না। তিনি বাংলা ভাষার প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদের (১৯৩৬-১৯৯২) প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন।
আকরাম খান ১৮৬৮ সালে পশ্চিম বঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার হাকিমপুর এলাকায় জন্ম গ্রহন করেন।  প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তাঁর খুব বেশি ছিল না। পড়ালেখার জন্য তিনি ইউরোপ বা বৃটিশ যাননি। তিনি কলকাতা আলীয়া মাদ্রাসা থেকে শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করেন। খুব অল্প বয়সেই তাঁর সাংবাদিকতা পেশায় হাতেখড়ি।
১৯৩৬ সালের ৩১ অক্টোবর মওলানা মুহাম্মদ আকরাম খাঁ দৈনিক আজাদ পত্রিকার প্রকাশনা শুরু করেন। সেই সময় বাংলা সংবাদপত্র প্রকাশ একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল এবং দৈনিক আজাদ ছিল বাংলাভাষার প্রথম সংবাদপত্র। মুসলিম লীগের সমর্থন যোগাতে এই বাংলা পত্রিকাটি সেই সময় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
মাওলানা মুহাম্মদ আকরাম খাঁ ১৯০৮ সাল থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত দি মোহাম্মদী ও আল-ইহসান পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। আহলে হাদীস ও মোহাম্মদী আকবর পত্রিকায় তাঁর সাংবাদিকতার হাতেখড়ি। তিনি ১৯২০ থেকে ১৯২২ পর্যন্ত সময়ে কলকাতা থেকে জামানা ও সেবক পত্রিকা প্রকাশ করেন। তৎকালীন সময়ে তিনি সেবক পত্রিকার মাধ্যমে অসহযোগ আন্দোলন ও স্বদেশী আন্দোলন সমর্থন প্রদান করেন। এর মধ্য দিয়ে স্বদেশী আন্দোলন ও অনহযোগ আন্দোলন বেগবান হয়। একপর্যায়ে বেনিয়া ব্রিটিশ সেবক পত্রিকা বন্ধ করেন দেয় এবং তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
মাওলানা মুহম্মদ আকরাম খাঁ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে রাজনীতি শুরু করেন। মওলানা আকরাম ছিলেন ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত মুসলিম লীগের একজন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ১৯১৮ থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত তিনি খেলাফত এবং অসহযোগ আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯২০ সালে ঢাকার আহসান মঞ্জিলে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে তিনি নিখিল ভারত খেলাফত আন্দোলন কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। এই সম্মেলনে খেলাফত আন্দোলনের অন্যতম নেতা মওলানা আবুল কালাম আজাদ, মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদি এবং মওলানা মজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। আকরাম খাঁনের দায়িত্ব ছিল তুর্কি খেলাফত থেকে ফান্ড সংগ্রহ করা। ১৯২০-১৯২৩ সময়ের মধ্যে তিনি বাংলার বিভিন্ন স্থানে জনসভা বা সম্মেলনের আয়োজন করে খেলাফত আন্দোলন এবং অসহযোগ আন্দোলন  গতিশীল করার চেষ্ঠা করেন। হিন্দু মুসলিম ভাতৃত্বের ক্ষেত্রে ১৯২২ সালে আকরাম খাঁ চিত্ত রঞ্জন দাসের স্বরাজ পার্টির পক্ষ নেন। এবং ১৯২৩ সালের বাংলা সন্ধির সময়ও তিনি একই পক্ষে ছিলেন। ১৯২৬-১৯২৭ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং অন্যান্য সমসাময়িক রাজনৈতিক ঘটনাবলীর কারণে আকরাম খাঁ ভারতীয় রাজনীতিতে তার বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন এবং তিনি স্বরাজ পার্টি এবং কংগ্রেস থেকে সরে দাঁড়ান। ১৯২৯ থেকে ১৯৩৫ সালের মধ্যে তিনি গ্রাম্য রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৩৬ সালে তিনি  গ্রাম্য রাজনীতি থেকে সরে গিয়ে সক্রিয় ভাবে মুসলিম লীগের সাথে যুক্ত হন। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৪৭ সালের ভারত ভাগের পর তিনি পূর্ব বাংলায় চলে আসেন এবং ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
মাওলানার সাহিত্য কর্মের মধ্যে রয়েছে, ১. সমস্যা ও সমাধান, ২. আমপারার বাংলা অনুবাদ, ৩. মোস্তফা-চরিত,
৪. মোস্তফা-চরিতের বৈশিষ্ট্য, ৫. বাইবেলের নির্দেশ ও প্রচলিত খ্রীষ্টান ধর্ম, ৬. মুসলীম বাংলার সামাজিক ইতিহাস, ৭. তাফসীরুল কোরআন (১-৫ খন্ড)।
মওলানা মুহাম্মদ আকরাম খাঁ ১০১ বছর বয়সে ১৯৬৯ সালের ১৮ আগষ্ট রাজধানী বংশালে আহলে হাদীস মসজিদে নামাযরত অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। আমি তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি। আল্লাহ্ তাঁকে বেহেস্তে নসীব করুন।
বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বাংলদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার (মরনোত্তর) স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, ১৯৮১ প্রদান করেন।
লেখক : সাংবাদিক, গবেষক।
islamcox56@gmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন